ডিজিটাল বাংলাদেশের নেক্সট স্টেপ হতে যাছে ডিজিটাল ব্যাংক

   


ডিজিটাল ব্যাংক কি? নগদ ও বিকাশ কি আদো থাকবে?

অনেক জল্পনা কল্পনা গুঞ্জনের অবসান ঘটিয়ে বাংলাদেশে ব্যাংকিং ডিজিটাল ব্যাংক গঠন করার নীতি অনুমোদন করা হয়েছে। প্রায় অনেক দিন ধরেই শুনা যাচ্ছিল যে ডিজিটালাইজেশনের ক্ষেত্রে নেক্সট যে স্টেপ হবে সেটা বাংলাদেশে ডিজিটাল ব্যাংক গঠন করা। অনেকেই ধারণা করে ছিলো যে বিশেষ করে যখন ইন্ডিয়া আর পাকিস্তানে ডিজিটাল ব্যাংক গঠন করা হয়েছে তার মানে নেক্সট বাংলাদেশ।  বাংলাদেশ ব্যাংক বলেন এক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংক যেহেতু অথরিটি ব্যাংকের হর্তাকর্তা বাংলাদেশ ব্যাংক। প্রায় দেড়-দুই বছর ধরে অনেকেই মোটামুটি আনঅফিশিয়াল ভাবে বলতে ছিলো যে (অলরেডি যখন ভারত পাকিস্তান ডিজিটাল ব্যাংক আছে) তাহলে নেক্সট মনে হয় ডিজিটাল ব্যাংক ব্যবস্থা বাংলাদেশে আসবে। এতো দিন আমরা সেটা শুনা কথা শুনে আসছি। সো ফাইনালি ১৪ জুন ২০২৩ বাংলাদেশ ব্যাংক একটা আবেদন পত্রের মাধ্যমে এ্যানাউন্স করেছে যে বাংলাদেশ ব্যাংক ডিজিটাল ব্যাংক স্থাপন করার জন্য প্রস্তুত। এছাড়াও বাংলাদেশ ব্যাংক একটা গাইড লাইন প্রকাশ করেছে (ডিজিটাল ব্যাংক স্থাপন বিষয়ক গাইঠলাইন)। যেখানে বিস্তারিত ভাবে লেখা আছে ডিজিটাল ব্যাংক স্থাপনের নীতিমালা। বাংলাদেশ ব্যাংক কিভাবে চায় যে একটা ডিজিটাল ব্যাংক হোক বাংলাদেশে। এবং ডিজিটাল ব্যাংক থেকে কি কি এক্সপেক্টডেট থাকলে সেটা কে ডিজিটাল ব্যাংক বলা যাবে ,কি কি থাকা যাবে না তা নিয়ে বিশাল বড় গাইডলাইন প্রকাশ করা হয়েছে যেখানে কি কি গাইডলাইন ফলো করলে আপনি ডিজিটাল ব্যাংক এর জন্য আবেদন করতে পারবেন। আবেদন করার পুরো প্রসেসটা তারা সুন্দর ভাবে বলে দিয়েছে।

          এখন তাহলে আসি ডিজিটাল ব্যাংক কি?       

 

প্রযুক্তি এগিয়ে যাচ্ছে। সারা দুনিয়া এখন হাতের মুঠোয় বন্ধী। পৃথিবীর প্রায় সব দেশেই এখন ডিজিটাল ব্যাংকিং এর সুবিধা আছে। ইতিমধ্যে ডিজিটালাইজেশনে একধাপ এগিয়ে গিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকও এখন ঘোষণা দিয়ে দিলো যে তারাও প্রস্তুত ডিজিটাল ব্যাংকিং সুবিধা দেওয়ার জন্য।

ডিজিটাল ব্যাংক হলো ব্যাংকিং পরিষেবায় একটি নতুন উদ্ভাবনী সৃষ্টি যা আপনি আপনার মোবাইল বা অন্য ইলেক্ট্রনিক ডিভাইসের মাধ্যমে ডিজিটাল ব্যাংকিং কার্যক্রম সম্পাদন করতে পারবে।

সাধারণ ভাবে যদি বলি তাহলে ডিজিটাল ব্যাংকিং হল কোন ধরণের কাগজপত্র ছাড়াই ডিজিটাল ভাবে ইন্টারনেট ভিক্তিক ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে যে ব্যাংকিং সেবা আপনি পাবেন তাকে ডিজিটাল ব্যাংকিং বলা হয়।

এক কথায় বলতে গেলে পুরোপুরি ভার্চুয়ালি একটা ব্যাংকিং ব্যবস্থা। অনেকটা আমার মনে হয় বর্তমান বিকাশ/নগদ এবং প্যাপাল এর মধ্যর্তী এডভান্সড একটা সিস্টেম । যখন আমরা সাধারণ গ্রাহকদের জন্য  সেবা সিস্টেম চালু তখন  এক্স্যাক্ট বুঝা যাবে। স্বাধীন একটা ব্যাংকিং সিস্টেম হবে যার লোকেশন হবে সারা বাংলাদেশে  থাকবে না কোন নির্দিষ্ট অফিস, ব্রাঞ্চ, কোন চেক বই, কোন রিসিপ্ট বই যার যাবতীয় কাজ সকল লেনদেন হবে অনলাইনে।ইভেন কোন এটিএম বুথ ও থাকবে না। একটা এ্যাপস থাকবে যার মাধ্যমে আপনি একটা এ্যাকাউন্ট খুলে ডিজিটাল ব্যাংকিং সেবা  নিতে পারবেন। এই ডিজিটাল ব্যাংকিং গ্যাহকরা অনলাইন পণ্য এবং অন্যান্য পরিষেবা গুলি এক্সেস করতে পারবে।

আমরা যে সরাসরি ব্যাংক গিয়ে লাইনে দাঁড়িয়ে যে সেবা নিয়েছি সেটাই আমরা অনলাইনে নিতে পারবো নিজের ঘরে বসে।   

ডিজিটাল ব্যাংকিং শুধু মাত্র বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতিমালা অনুযায়ী চলবে। কিন্তু তার সরাসরি কোন স্থাপনা থাকবে না। স্থাপনা বিহীন থাকবে এর কার্যালয়। এবং ব্যাংকিং কাজ লেনদেন ,তথ্য সেবা , নির্দেশনা সব অনলাইন ভিক্তিক এ্যাপস এর মাধ্যমে পরিষেবা দেওয়া হবে গ্রাহকদের। গ্রাহকরা ২৪/৭ এর সেবা গ্রহণ করতে পারবে। ডিজিটাল ব্যাংক লেনদেনের সুবিধার্থে আপনাকে ভার্চুয়ালি কার্ডের সেবা দিতে পারবে। এটার কোন সরাসরি প্লাস্টিকের কার্ড বর্তমানে যে কার্ড গুলো ব্যবহার করে থাকি সেটাই  ভার্চুয়ালি ব্যবহার করতে পারবো। এবং তার লেনদেন অনলাইনের মাধ্যমে হবে।  

এখন আপনার মাথায় প্রশ্ন আসতেই পারে ডিজিটাল ব্যাংকিং সুবিধা কি সাধারণ জনগণ নিতে পারবে?

হ্যাঁ অবশ্যই পারবে। একজন সাধারণ নাগরিক গ্রাহক হিসেবে ডিজিটাল ব্যাংকিং সেবা নিতে হলে তাকে এ্যাপস ভিক্তিক যাবতীয় নির্দেশনা মেনে এ্যাকাউন্ট ক্রিয়েট করে ব্যাংকিং সেবা নিতে হবে।

ডিজিটাল ব্যাংক স্থাপনে শর্ত –

তাহলে চলুন জেনে আসি ডিজিটাল ব্যাংকিং শুরু করার জন্য এবংকারা এই ডিজিটাল ব্যাংক স্থাপন করার জন্য এ্যাপ্লিকেবল বা উপযুক্ত। আমি যদি প্রথম পয়েন্ট আসি

তাহলে

মনিটারি রিকোয়ারমেন্টঃ – বাংলাদেশ ব্যাংক যে গাইডলাইন প্রকাশ করেছে তাতে বলা আছে একটা ডিজিটাল ব্যাংক খোলার জন্য তার মূলধন হিসেবে ১২৫ কোটি টাকা দেখাতে হবে। তবে একটা ভাল খবর এটাই যে আপনার একার ১২৫কোটি টাকা দেখাতে হবে না। আপনার সব শেয়ার হোল্ডার মিলে ১২৫ কোটি টাকা দেখালেই হবে।

তাহলে আমি যদি ধরি, একজন শেয়ার হোল্ডারের কাছে মিনিমান ৫০ লাখ টাকা আছে। এখন আপনার আসেপাশে এনাফ পরিমাণ মানুষ যোগার করতে পারলে যাদের কাছে ৫০ লাখ টাকা আছে এবং সবাই মিলে ১২৫কোটি টাকা হয়েছে সেক্ষেত্রে আপনি বা আপনারা ডিজিটাল ব্যাংক এর জন্য আবেদন করতে পারবেন।

যেখানে সাধারণ ব্যাংক খুলতে ৫০০ কোটি টাকা মূলধন দেখাতে হয় সেখানে আপনার ডিজিটাল ব্যাংক ১২৫ কোটি টাকাতে এ্যাপ্লিকেবল।

সব থেকে ইন্টাররেস্টিং বিষয় যেটা আমার কাছে মন হয়েছে আপনাকে আবেদন করার জন্য গুনতে হবে ৫লাখ টাকা এবং সেটা নট রিফান্ডেবল। আপনি ডিজিটাল ব্যাংক স্থাপন করার জন্য ৫লাখ টাকা দিয়ে এ্যাপ্লাই করলেন কিন্তু কোন কারনে আপনি রিজেক্টেড হলেন তাহলে সেই ৫লাখ টাকা আপনাকে রিফান্ড করবে না। কারণ ডিজিটাল ব্যাংক এর জন্য এ্যাপ্লিকেশন ফি ৫ টাকা ধরা হয়েছে।

এখন আমাদের দেখার অপেক্ষা কারা এই সৌভাগ্যবান সব শর্ত পূরণ করে গাইডলাইন মেনে ডিজিটাল ব্যাংক স্থাপনের জন্য এ্যাপ্রোভাল পায়। আরেকটা ভাল খবর হলো বাংলাদেশ ব্যাংক  ডিজিটাল ব্যাংকিং এ লাইসেন্স দিবে। তার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক সুন্দর একটা  License.bb.org.bd পোর্টাল বানায়ছে এখানে গিয়ে আপনি লাইসেন্স এর জন্য আবেদন করতে পারবেন। এবং বাংলাদেশ ব্যাংক এই লাইসেন্স দেবার ৫ বছরের মধ্যে দেশের বাজারে আপনার আইপিও ছাড়তে হবে।

দ্বিতীয় পয়েন্টে যদি আসিঃ ডিজিটাল ব্যাংক গঠনের জন্য আপনার মূলধন যেটা দেখাবে সেই টাকা রাষ্ট্রায়ত্ত ট্যাক্স পরিশোধিত হতে হবে। তার মানে কোন কালোবাজারি টাকা দিয়ে আপনি ডিজিটাল ব্যাংক স্থাপনের জন্য এ্যাপ্রোভাল পাবেন না।  

কারা কারা এই ডিজিটাল ব্যাংক স্থাপনের জন্য এ্যাপ্লিকেশন করছে

যদিও বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে এখন পর্যন্ত কারা কারা এ্যাপ্লিকেশন করেছে তার লিস্ট প্রকাশ করেনি। তবে বিভিন্ন সাইট সূত্রে জানা গেছে যে

১০টি ব্যাংকের জোট মিলে ১২৭ কোটি ৭৮ লাখ টাকা বিনিয়োগ করার জন্য প্রস্তুত বলে জানিয়েছে এবং তাদের ডিজিটাল ব্যাংক এর নাম “ডিজিটাল টেন পিএলসি”

আবার বাংলাদেশের “বিকাশ ডিজিটাল ব্যাংক” এর সাথে ব্র্যাক ব্যাংক,সাথে যুক্তরাষ্ট্রে “মানি ইন মোশন এএলসি সহ আরো ৪ টি ফাউন্ডেশন মিলে প্রস্তাবিত আছে।

  “নগদ ডিজিটাল ব্যাংক পিএলসি” স্থাপনে জন্য এ্যাপ্লিকেশন করেছে করেছে নগদ ও সাথে অন্য কিছু উদ্যোক্তা মিলে। 

এছাড়া বাংলাদেশের মোবাইল অপারেটর বাংলালিংক ও তাদের প্রধান কোম্পানি ভিওন মিলে এ্যাপ্লিকেশন করেছে।

আবার কিছু উদ্যোক্তা প্রতিষ্ঠান মিলে “উপায় ডিজিটাল ব্যাংক পিএলসি” নামে এ্যাপ্লিকেশন জমা দিয়েছে।

গুঞ্জন শোনা গেছে বাংলাদেশে ডিজিটাল সেবাদান প্রতিষ্ঠান পাঠাও “ডিজিটাল ব্যাংক”গঠনে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। 

এখন তাহলে দেখার অপেক্ষা বাংলাদেশ ব্যাংক তাদের প্রস্তাবিত এ্যাপ্লিকেশন মোতাবেক কাদের এপ্র্যোভাল দেয়। আর কারা কারা রিজেক্ট হয়ে ফিরে আসে।  

ডিজিটাল ব্যাংকিং এ কি কি সুবিধা পাবে গ্রাহকরা

১। সময় ও খরচ দুইটায় বাঁচবে। ট্র্যেডিশনাল ব্যাংকিং আপনাকে ফিজিক্যালি গিয়ে ফাইন্যান্সিয়াল যে কার্যক্রম গুলো করতে হতো ডিজিটাল ব্যাংকিং সেটা করতে হবে না।

২। ব্যাংক স্টেটমেন্ট আপনি ১ মিনিটের মধ্যেই আপনার ব্যাংক স্টেটমেন্ট বের করতে পারবেন তার জন্য আপনাকে আপনার ঠিকানা বা ঢাকা অন্য কোন জায়গায় যেতে হবে না।

৩।আপনি ঘরে বসেই আপনার ডিজিটাল ব্যাংকিং এর মাধ্যমে লোনের এ্যাপ্লিকেশন জানাতে পারবেন। তার জন্য তাকে ট্রেডিশনাল ব্যাংকের মতো ব্রাঞ্চে সরাসরি না গিয়ে ভার্চুয়াল ডিজিটাল ব্যাংকে করতে পারবেন।

৪। যতোই এটিএম বুথ থাকুক, ট্রেডিশনাল ব্যাংকিং এ্যাপ্স থাকুক,যতই অনলাইন টান্সজেক্টশন থাকুক কিন্তু তারা ডিজিটাল ব্যাংক এর মতো অফার করতে পারে না।

  ডিজিটাল ব্যাংকিং এর সেগমেন্ট হলো পুরোটাই আলাদা। কারণ ডিজিটাল ব্যাংক হলো টেকনিক্যাল টেকনোলজিতে ফাস্ট আর গতানুগতিক ট্র্যেডিশনাল ব্যাংক ফাইনান্সে ফাস্ট।

ইন্টান্যাশনালি ডিজিটাল ব্যাংক সফল। পাশের দেশ ভারত ও সফল ভারতে অলরেডি ৬/৭ টি ডিজিটাল ব্যাংক রয়েছে। তার মানে আমরা ধরে নিতে পারি বাংলাদেশও সফল হতে যাচ্ছে ডিজিটাল ব্যাংকিং পরিসেবায়।  

ডিজিটাল ব্যাংকিং এ অসুবিধা বলতে গেলে

ব্যাংকিং কার্যক্রম পুরোটাই ডিজিটাল থাকায় যেহেতু ট্যাকনোলজিতে বাংলাদেশ এখনো অনেক ফাস্ট নয়। তাই ডিজিটাল ব্যাংকিং সিস্টেম আদোও এ্যাপ্স বেইসড ডিজিটাল ব্যাংক মানুষ গ্রহণ করতে পারবে কিনা।

 

 

 


আমার এই আর্টিকেলের টাইটেলে দেওয়া ছিল নগদ ও বিকাশ কি আদো থাকবে?

নগদ আর বিকাশ হলো কিছুটা ডিজিটাল ব্যাংক এর লাইট ভার্সন বলা যায়। যদিও বিকাশ আর নগদ কোন ব্যাংক না বিকাশ আর নগদ হল একটা এ্যামেফেস।  

নগদ আর বিকাশ দুটোই কিন্তু ডিজিটাল ব্যাংকিং স্থাপনে এ্যাপ্লিকেশন জমা দিয়েছে। আমার ধারনা মতে তারা তাদের এই ডিজিটাল লেনদেন আরও ফাস্ট এডভান্স লেভেলে ডিজিটাল ব্যাংকিং সেবায় এগিয়ে নিয়ে যাবে। তবে এক্ষেত্রে তাদের গ্রাহক হয়তো ডিজিটাল ব্যাংকিং পরিসেবার কনভার্ট হবে।

আমি খুব এক্সাইটেড যে ডিজিটাল ব্যাংকিং সেবার এক্সপেরিয়েন্স কেমন হবে? আমার মতো আপনারাও খুব বেশি এক্সাইটেড হয়ে আছেন এই ডিজিটাল ব্যাংকিং সিস্টেম কেমন হতে যাচ্ছে প্রথম এক্সপ্রেরিয়েন্স কেমন হবে সেটা নিয়ে ভাবনার শেষ নেই।

সর্বশেষ বলতে চায় দেশ এগিয়ে যাচ্ছে প্রযক্তির ছোঁয়ায়। ডিজিটাল ব্যাংকিং সিস্টেমের মাধ্যমে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে উঠুক সমৃদ্ধময় আগামীর বাংলাদেশ।  

Post a Comment

0 Comments