নতুন ভোটার আইডি কার্ড করার নিয়ম
বাংলাদেশের
নাগরিক হিসেবে একজন ব্যক্তির জাতীয় পরিচয় পত্র বা ভোটার আইডি কার্ড থাকাটা বাধ্যতামূলক।
কারন একটা জাতীয় পরিচয় পত্র আপনার কোন দেশের নাগরিক তার পরিচয় বহন করে। আপনার বয়স ১৬ হলে জাতীয় পত্র বা ভোটার আইডি
কার্ড এর জন্য আবেদন করা উচিত। আর বয়স যদি ১৮ কিংবা তারও বেশি কিন্তু ভোটার আইডি কার্ড
এর আবেদন করেননি তাহলে এখনই অনলাইনে ভোটার আইডি কার্ড এর জন্য আবেদন করে ফেলুন।
একজন মানুষ হিসেবে আপনি দেশের নাগরিক হিসেবে আপনার
জাতীয় পরিচয় পত্র বা ভোটার আইডি কার্ড খুবই গুরুত্বপূর্ণ। জাতীয় পরিচয় পত্র বা ভোটার
আইডি কার্ড আপনার আমার দৈনন্দিন জীবনে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ কাজে প্রয়োজন পরে। যেমন
– জমি কেনাবেচা থেকে শুরু করে পার্স্পোর্ট করতে,সরকারি-বেসরকারি চাকরির ক্ষেত্রে,বিদেশেগমন
করতে জাতীয় পরিচয় পত্রের প্রয়োজনীয়তা অনেক। আবার বর্তমানে মোবাইলের সিম রেজিস্ট্রেশন
করতেও ভোটার আইডি কার্ড প্রয়োজন।
এখন তাহলে কিভাবে
আপনি নতুন ভোটার আইডি কার্ড করবেন তার নিয়মাবলি
গুলো জেনে নিন আমার আজকের ব্লগপোস্ট এর মাধ্যমে।
বর্তমানে আপনি
দুইটি পদ্ধতিতে ভোটার আইডি কার্ড বা জাতীয় পরিচয় পত্র করতে পারবেন। একটি হল- অনলাইন
আবেদন নিবন্ধন এর মাধ্যমে অপরটি হলো সরাসরি জাতীয় নির্বাচন কমিশন অফিসে গিয়ে জাতীয়
পরিচয় পত্র বা ভোটার আইডি কার্ড নিবন্ধন ফর্ম পূরণ করার মাধ্যমে।
আর যদি সরকারি
নির্দেশনা মোতাবেক প্রতি ৩ বছর পর পর বাড়ি
বাড়ি গিয়ে ভোটার আইডি কার্ড হালনাগাদ করা হয় সেভাবেও করতে পারবেন। আমার জানা মতে সর্বশেষ
গতবছর ২০২২ সালের শেষের দিকে হালনাগাদ করা হয়।
জেনে আসি তাহলে
নতুন ভোটার আইডি কার্ড করতে কি কি লাগেঃ
১। অনলাইন ডিজিটাল
জন্ম নিবন্ধন সনদ
২। পিতা-মাতার/স্বামী/স্ত্রী
জাতীয় পরিচয়পত্র বা ভোটার আইডি কার্ডের ফটোকপি
৩। নাগরিক সনদ
৪। পাসর্পোট,টিন
সার্টিফিকেট,ড্রাইভিং লাইসেন্স ( ক্ষেত্র বিশেষে এই ডকুমেন্টস গুলো প্রয়োজন পরে)
৫। বিদ্যুৎ
বিলের কাগজ,ইউটিলিটি বিলের কাগজ,বাসার হোল্ডিং ট্যাক্স রশিদ।
৬। অনলাইন আবেদন
ফর্মের ডাউনলোড প্রিন্ট কপি।
এই ডকুমেন্টস
গুলো অনলাইন আবেদন সম্পন্ন হয়ে গেলে আবেদনের প্রিন্টকপি সহ আপনার নিকটস্থ কার্যালয়ে
সাবমিট করবেন।তারপর নির্ধারিত তারিখে গিয়ে আপনার ছবি এবং ফিঙ্গার প্রিন্ট দিয়ে আসবেন
।তারকিছু দিন পরে আপনাকে SMS এর মাধ্যমে আপনার ভোটার আইডি কার্ড নাম্বার জানিয়ে দেওয়া
হবে।
এখন তাহলে জেনে
নেই ভোটার আইডি কার্ড বা জাতীয় পরিচয় পত্র অনলাইনে আবেদন করতে আপনার যা যা করতে হবে
ঃ
১। সর্বপ্রথম
আপনাকে বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের অফিসিয়াল ওয়েবসাইট ভিজিট করতে হবে- ভিজিট লিংক –
২। তারপর আবেদন
লেখা বাটনে ক্লিক করুন
৩।একটা একাউন্ট
ক্রিয়েট করুন
৪। ভোটার হওয়ার
জন্য আপনার ব্যক্তিগত তথ্য প্রদান করুন
৫।তারপর আবেদন
সম্পন্ন হলে আবেদনের ডাউনলোড কপি প্রিন্ট করে রাখুন
৬। আপনার ভোটার
আইডি কার্ড করার সকল প্রয়োজন ডকুমেন্টস গুলো ও আবেদনের প্রিন্ট কপি সহ সাথে নিয়ে আপনার
নিকটস্থ উপজেলা নির্বাচন অফিস কার্যালয়ে জমা দিন
৭।আপনার বায়োমেট্রিক
তথ্য প্রদান করুন
৮। সর্বশেষ
আপনি আবেদন সফল হয়ে গেলে আপনাকে একটা ভোটার স্লিপ দেওয়া হবে সেটা সংগ্রহ করুন
নতুন ভোটার
আইডি কার্ড বা জাতীয় পরিচয় পত্র করার জন্য অনলাইন আবেদনের পর্যাক্রমে ধাপে ধাপে কিভাবে
করবেন সেটার বিস্তারিত নিয়মাবলি দেওয়া হলো-
প্রথম ধাপঃ
অনলাইনে আবেদনের জন্য প্রথমে আপনার মোবাইল অথবা ল্যাপ্টপ,কম্পিউটারের Google সার্চ
অপশনে যাবেন।এবং সার্চ বারে নতুন ভোটার আইডি কার্ড করার নিয়ম লিখে ক্লিক করলেই বাংলাদেশ
নির্বাচন কমিশন Bangladesh
NID Application System
এই ওয়েবসাইট চলে আসবে তারপর ওয়েবসাইটিতে প্রবেশ করবেন।প্রবেশ করার সাথে সাথে ‘ আবেদন করুন ‘’ (Apply for National ID) বাটনে
ক্লিক করবেন।তারপর একাউন্ট নিবন্ধন(New Registration) নামে একটা ইন্টারফেস সামনে আসবে।সেখানে
আপনার নাম বা যার ভোটার আইডি করবেন তার ইংরেজি নাম ও জন্মতারিখ দিবেন। এবং নাম ও জন্মতারিখটি
অবশ্যই ডিজিটাল জন্ম নিবন্ধন সনদ অনুযায়ী সঠিক হতে হবে।( কোনভাবেই যেন ভুল তথ্য না
দেওয়া হয় প্রতিটা ধাপ পূরণ করার সময় সর্তক থাকতে হবে)। তারপর আপনার মোবাইল নাম্বারটি
প্রদান করবেন এবং আপনার মোবাইল SMS ৬ ডিজিটের একটি ওটিপি( OTP Code)কোড আসবে।সেটি বসাবেন।
তারপর ইউজারনেম
এবং পাসওয়ার্ড লেখা একটি ইন্টারফেস আসবে।সেখানে একটি ইউজারনেম এবং একটি স্ট্রং পাসওয়ার্ড
দিয়ে কন্টিনিউতে ক্লিক করবেন (আপনার ইউজারনেম এবংপাসওয়ার্ডটি মনে রাখতে হবে যেন পরবর্তীতে
কোন তথ্য সংশোধন বা এডিট করতে চাইলে বা আপনার ভোটার আইডি কার্ড এর আবেদন সম্পন্ন হয়ে
গেলে ভোটার আইডি কার্ডের বর্তমান অবস্থান চেক করতে পারবেন).
দ্বিতীয় ধাপঃ
ইউজারনেম এবং পাসওয়ার্ড সফল হয়ে গেলে আপনাকে প্রোফাইল ডিটেইলস (Profile Details) নামে
একটি ইন্টারফেস সামনে আসবে।তারপর প্রোফাইল ডিটেইলস ক্লিক করলে নিছে ৩টি ড্যাশবোড সামনে
আসবে Edit Profile, (ব্যক্তিগত তথ্য) Documents,( কাগজপত্র) Confirm(নিশ্চিতকরণ) এবং পর্যায়ক্রমে তিনটি ড্যাশবোড পূরণ
করতে হবে।
তারপর Edit
profile ক্লিক করলে নিচে Personal Informatation,(ব্যক্তিগত তথ্য) Identification
Information,(আইডেন্টিফিকেশন তথ্য) Address(ঠিকানা) তিনটি অপশন আসবে এবং পর্যায়ক্রমে
সেগুলো পূরণ করতে হবে। প্রথমে Personal Information(ব্যক্তিগত তথ্য)ক্লিক করলে নতুন
আরেকটি ইন্টারফেস আসবে। সেখানে আপনার বাংলা ও ইংরেজি নাম ,জন্মতারিখ, ব্লাড গ্রুপ,
জেন্ডার, জাতীয়তা,জন্মস্থান এবং পিতামাতার তথ্য দিয়ে সবকিছু পূরণ করতে হবে। (মনে রাখতে
রেড মার্ক করা জায়গা গুলোতে বাধ্যতামূলক তথ্য দিয়ে পূরণ করতে হবে কোনভাবেঈ স্কিপ করা
যাবে না)। তারপর আপনাকে নিয়ে আসবে Identification Information(আইডেন্টিফিকেশন তথ্য)
ইন্টারফেসে।এখানে আপনার শিক্ষাগত যোগ্যতা,পেশা,ডাইভিং লাইসেন্স নাম্বার,টিন সনদ,ধর্ম,পাসর্পোট
নাম্বার এবং প্রয়োজনীয় সকল তথ্য দিয়ে পূরণ করবেন।
পরের অপশন
Adress(ঠিকানা) ইন্টারফেসে আসবেন।এখানে আপনি প্রথমে দেখতে পাবেন (Voter Address-
present এবং Permanent ) দুটি অপশন ।এখন আপনি যেই ঠিকানার ভোটার হবেন সেই ঠিকানাতে
টিক মার্ক দিবেন। তারপর আপনার বর্তমান ঠিকানা ও স্থায়ী ঠিকানা ধাপে ধাপে উল্লেখ করবেন।এবং
এই পর্যন্ত Edit Profile এর সব তথ্য দেওয়া হয়ে গেলে পরবর্তী Documents ইন্টারফেসে যাওয়ার
জন্য Next বাটনে ক্লিক করবেন।
এই
Documents ইন্টারফেসে এসে অনলাইন আবেদনের সময় আপনাকে কোনরকম ডকুমেন্টস দিতে হবে না
।শুধু সাবমিট বাটনে ক্লিক করবেন।Confirm(নিশ্চিতকরণ)অপশনে এসে উপরের সাবমিট ক্লিক করলেই
আপনার আবেদনটি জমা হয়ে যাবে। যদি কোন তথ্য এডিট করতে চান তাহলে ব্যাকে ক্লিক করে এডিট
করতে পারবেন।
আপনার নতুন
ভোটার আইডি কার্ড করার অনলাইন আবেদনটি সফল হয়েছে।
তৃতীয় ধাপঃ
তারপরে আপনার কাজ হল- অনলাইন আবেদন করার পর আপনি একটি ডাউনলোড পিডিএফ পাবেন। এবং কিছু
অংশ ফাকা পাবেন এটি মূলত আবেদন ফর্ম। ডাউনলোড কপি প্রিন্ট করে এখানে আপনাকে কিছু তথ্য
প্রদান করতে হবে যেমন হতে পারে আপনার পিতামাতা বা আত্নীয় অথবা আপনার নিকটস্থ এলাকার
চেয়্যারম্যান বা মেম্বার এর স্বাক্ষর ও ভোটার আইডি কার্ড নাম্বার। এই তথ্য গুলো পূরণ
করে প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস গুলো সাথে করে নিয়ে আপনার উপজেলা নির্বাচন অফিসে বা নিকটস্থ
কার্যালয়ে জমা দিবেন। উপরে লেখা আছে কি কি ডকুমেন্টস আপনাকে যুক্ত করতে হবে।
আমি আবারো বলে
দিচ্ছি –
১। এখন যেই
আবেদন ফর্মটা প্রিন্ট করেছেন সে ডাউনলোড প্রিন্ট কপি নিবেন।সাথে আপনার ২।শিক্ষাগত সার্টিফিকেট
সেটা হতে পারে এস এসসি মাধ্যমিক বা সমমানের মার্কসিট বা সার্টিফিকেটের ফটোকপি। (এবং
এই সার্টিফিকেটের নাম জন্মসাল অনুযায়ী আপনার ভোটার আইডি কার্ড হবে। তাই আবেদন করার
সময় জন্ম সনদ ও শিক্ষা সনদে থাকা আপনার তথ্য গুলো সঠিক হতে হবে। একটা ভুল আপনার আইডি
কার্ডে সেটা ভুল উপস্থাপন হবে)।
৩। জন্ম সনদ
বাংলা অথবা ইংরেজি ফটোকপি
৪। পিতামাতার
জাতীয় পরিচয় পত্র কার্ডের ফটো কপি (বাধ্যতামূলক)
৫। বাসার হোল্ডিং
ট্যাক্সের রশিদ
৬। একটি সচল
মোবাইল নাম্বার
৭। বাসার বিদ্যুৎ
বিলের কাগজের ফটোকপি
৮। আপনি যদি
ভাড়া বাসায় থাকএন তাহলে ভাড়া বাসার ভাড়ার রশিদ
৯। নাগরিক সনদ
ও ব্লাড গ্রুপ এর প্রমাণ পত্র যদি থাকে।
উপরে উল্লেখিত
সকল ডকুমেন্টস একসাথে সঠিক ভাবে আপনার নিকটস্থ উপজেলা নির্বাচন কার্যালয়ে জমা দিতে
হবে।এবং উক্ত ডকুমেন্টস গুলো যাচাই-বাচাই করে সব তথ্য সঠিক থাকলে পরবর্তীতে নির্বাচন
অফিস থেকে আপনার সাথে যোগাযোগ করিবে।
চর্তুথ ধাপঃ
চর্তথ ধাপ এবং শেষ ধাপে এসে তারা আপনার সব প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস চেক করা শেষ হলে বায়োমেট্রিক
তথ্য প্রদানের জন্য যোগাযোগ করতে বলবে। তারপর সব তথ্য দেওয়া হয়ে গেলে আপনার আবেদনটি
অনুমোদন হলেই তার ১০ থেকে ১৫ দিন পরেই আপনার মোবাইলে SMS এর মাধ্যমে জানানো হবে আপনার
অনলাইন ভোটার আইডি কার্ড কপি ডাউনলোড করতে করার জন্য এভ্যালেবল দেখাবে। তখন অনলাইনে
আপনার ইউজারনেম এবং পাসওয়ার্ড ও অনলাইন আবেদনের স্লিপ নাম্বার দিয়ে সেটা তুলতে পারবেন
যেকোন সময়।
সর্বশেষ একটি
কথা বলতে চাই সঠিক ও নির্ভুল তথ্য দিয়ে আপনার জাতীয় পরিচয় পত্র বা ভোটার আইডি কার্ড
করুন। এবং একজন সচেতন নাগরিক হিসেবে আপনার দেশের নাগরিক পরিচয় বহন করুন।
আমি আশা করছি
উপরোক্ত লেখাটি পড়ে নতুন ভোটার আইডি কার্ড অনলাইনে আবেদন করার নিয়ম জেনে সকল ধাপসমূহ
বুঝে আপনি নিজে নিজেই ঘরে বসে অনলাইন ভোটার আইডি কার্ডের আবেদন খুব সহজেই করতে পারবেন।
আমার এই আর্টিকেলটি
পড়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ!
0 Comments